আন-নিসা, আয়াত ১১৪-১৫৪

পৃষ্ঠা নং-২৮৪

শিরকের তাৎপর্যঃ শিরকের তাৎপর্য হচ্ছে- আল্লাহ্ ব্যতীত কোন সৃষ্টবস্তুকে ‘ইবাদত এবং মহব্বত ও সম্মান প্রদর্শনে আল্লাহ্‌র সমতুল্য মনে করা। জাহান্নামে পৌঁছে মুশরিকরা যে উক্তি করবে, কুরআন পাক তা উদ্ধৃত করেছেঃ

تَاللَّهِ إِن كُنَّا لَفِي ضَلَالٍ مُّبِينٍ * إِذْ نُسَوِّيكُم بِرَبِّ الْعَالَمِينَ

অর্থাৎ, আল্লাহ্‌র কসম, আমরা প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় লিপ্ত হয়েছিলাম যখন আমরা তোমাদেরকে বিশ্ব-পালনকর্তার সমতুল্য স্থির করেছিলাম।

জানা কথা যে, মুশরিকদেরও এরূপ বিশ্বাস ছিল না যে, তাদের স্বনির্মিত প্রস্তরমূর্তি বিশ্ব-জাহানের স্রষ্টা ও মালিক। তারা অন্যান্য ভুল-বোঝাবোঝির কারণে এদেরকে ‘ইবাদতে কিংবা মহব্বত ও সম্মান প্রদর্শনে আল্লাহ্ তাআলার সমতুল্য স্থির করে নিয়েছিল। এ শিরকই তাদের জাহান্নামে পৌঁছে দিয়েছে। -(ফাতহুল মুলহিম)

জানা গেল যে, স্রষ্টা রিযিকদাতা, সর্বশক্তিমান, দৃশ্য ও অদৃশ্যের জ্ঞানী আল্লাহ্ তাআলার ইত্যকার বিশেষ গুণে কোন সৃষ্ট বস্তুকে আল্লাহর সমতুল্য মনে করাই শিরক।

  وَٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَعَمِلُواْ ٱلصَّٰلِحَٰتِ سَنُدۡخِلُهُمۡ جَنَّٰتٖ  تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ خَٰلِدِينَ فِيهَآ أَبَدٗاۖ وَعۡدَ ٱللَّهِ حَقّٗاۚ  وَمَنۡ أَصۡدَقُ مِنَ ٱللَّهِ قِيلٗا ١٢٢

১২২.যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে এবং সৎকর্ম করেছে, আমি তাদেরকে উদ্যানসমূহে প্রবিষ্ট করাব, যেগুলোর তলদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত হয়। তারা চিরকাল তথায় অবস্থান করবে। আল্লাহ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সত্য সত্য। আল্লাহর চাইতে অধিক সত্যবাদী কে?

  لَّيۡسَ بِأَمَانِيِّكُمۡ  وَلَآ أَمَانِيِّ أَهۡلِ ٱلۡكِتَٰبِۗ  مَن يَعۡمَلۡ سُوٓءٗا يُجۡزَ بِهِۦ  وَلَا يَجِدۡ لَهُۥ مِن دُونِ ٱللَّهِ وَلِيّٗا وَلَا نَصِيرٗا ١٢٣

১২৩.তোমাদের আশার উপরও ভিত্তি নয় এবং আহলে-কিতাবদের আশার উপরও না। যে কেউ মন্দ কাজ করবে, সে তার শাস্তি পাবে এবং সে আল্লাহ ছাড়া নিজের কোন সমর্থক বা সাহায্যকারী পাবে না।

وَمَن  يَعۡمَلۡ مِنَ ٱلصَّٰلِحَٰتِ مِن ذَكَرٍ أَوۡ أُنثَىٰ وَهُوَ مُؤۡمِنٞ  فَأُوْلَٰٓئِكَ يَدۡخُلُونَ ٱلۡجَنَّةَ وَلَا يُظۡلَمُونَ نَقِيرٗا ١٢٤

১২৪.যে লোক পুরুষ হোক কিংবা নারী, কোন সৎকর্ম করে এবং বিশ্বাসী হয়, তবে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের প্রাপ্য তিল পরিমাণও নষ্ট হবে না।

وَمَنۡ  أَحۡسَنُ دِينٗا مِّمَّنۡ أَسۡلَمَ وَجۡهَهُۥ لِلَّهِ وَهُوَ مُحۡسِنٞ وَٱتَّبَعَ  مِلَّةَ إِبۡرَٰهِيمَ حَنِيفٗاۗ  وَٱتَّخَذَ ٱللَّهُ إِبۡرَٰهِيمَ خَلِيلٗا ١٢٥

১২৫.যে আল্লাহর নির্দেশের সামনে মস্তক অবনত করে সৎকাজে নিয়োজিত থাকে এবং ইব্‌রাহীমের ধর্ম অনুসরণ করে, যিনি একনিষ্ঠ ছিলেন, তার চাইতে উত্তম ধর্ম কার? আল্লাহ ইব্‌রাহীমকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করেছেন।

وَلِلَّهِ  مَا فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَا فِي ٱلۡأَرۡضِۚ  وَكَانَ ٱللَّهُ بِكُلِّ شَيۡءٖ  مُّحِيطٗا ١٢٦

১২৬.যা কিছু নভোন্ডলে আছে এবং যা কিছু ভুমন্ডলে আছে, সব আল্লাহরই। সব বস্তু আল্লাহর মুষ্ঠি-বলয়ে।

وَيَسۡتَفۡتُونَكَ فِي ٱلنِّسَآءِۖ قُلِ ٱللَّهُ يُفۡتِيكُمۡ  فِيهِنَّ وَمَا يُتۡلَىٰ عَلَيۡكُمۡ فِي ٱلۡكِتَٰبِ فِي يَتَٰمَى ٱلنِّسَآءِ ٱلَّٰتِي لَا تُؤۡتُونَهُنَّ مَا كُتِبَ لَهُنَّ وَتَرۡغَبُونَ أَن تَنكِحُوهُنَّ  وَٱلۡمُسۡتَضۡعَفِينَ مِنَ ٱلۡوِلۡدَٰنِ وَأَن تَقُومُواْ لِلۡيَتَٰمَىٰ بِٱلۡقِسۡطِۚ  وَمَا تَفۡعَلُواْ مِنۡ خَيۡرٖ فَإِنَّ ٱللَّهَ كَانَ بِهِۦ عَلِيمٗا ١٢٧

১২৭.তারা আপনার কাছে নারীদের বিবাহের অনুমতি চায়। বলে দিনঃ আল্লাহ তোমাদেরকে তাদের সম্পর্কে অনুমতি দেন এবং কুরআনে তোমাদেরকে যা যা পাট করে শুনানো হয়, তা ঐ সব পিতৃহীনা-নারীদের বিধান, যাদেরকে তোমরা নির্ধারিত অধিকার প্রদান কর না অথচ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করার বাসনা রাখ। আর অক্ষম শিশুদের বিধান এই যে, ইয়াতীমদের জন্যে ইনসাফের উপর কায়েম থাক। তোমরা যা ভাল কাজ করবে, তা আল্লাহ জানেন।

আনুষঙ্গিক জ্ঞাতব্য বিষয়ঃ

শ্রেষ্ঠত্বের মানদণ্ডঃ

لَّيْسَ بِأَمَانِيِّكُمْ وَلَا أَمَانِيِّ أَهْلِ الْكِتَابِ

আয়াতে মুসলমান ও আহ্‌লে-কিতাবদের মধ্যে অনুষ্ঠিত একটি কথোপকথন উল্লেখিত হয়েছে। এরপর এ কথোপকথন বিচার করে উভয় পক্ষকে বিশুদ্ধ হেদায়েতের পর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অবশেষে আল্লাহ্‌র কাছে গ্রহণীয় ও শ্রেষ্ঠ হওয়ার একটি মানদণ্ড ব্যক্ত করা হয়েছে, যা সামনে রাখলে মানুষ কখনও ভ্রান্তি ও পথভ্রষ্টতার শিকার হবে না।

হযরত ক্বতাদাহ (রদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেনঃ একবার কিছু সংখ্যক মুসলমান ও আহ্‌লে-কিতাবের মধ্যে গর্বসূচক কথাবার্তা শুরু হলে আহ্‌লে-কিতাবরা বললঃ আমরা তোমাদের চাইতে শ্রেষ্ঠ ও সম্ভ্রান্ত। কারণ, আমাদের নবী ও আমাদের গ্রন্থ তোমাদের নবী ও তোমাদের গ্রন্থের পূর্বে অবতীর্ণ হয়েছে। মুসলমানরা বললঃ আমরা তোমাদের চাইতে শ্রেষ্ঠ। কেননা, আমাদের নবী সর্বশেষ নবী এবং আমাদের গ্রন্থ সর্বশেষ গ্রন্থ। এ গ্রন্থ পূর্ববর্তী সব গ্রন্থকে রহিত করে দিয়েছে। এ কথোপকথনের পরিপ্রেক্ষিতে আলোচ্য আয়াতটি অবতীর্ণ হয়।

এতে বলা হয়েছে যে, এ গর্ব ও অহংকার কারও জন্য শোভা পায় না। শুধু কল্পনা, বাসনা ও দাবী দ্বারা কেউ কারও চাইতে শ্রেষ্ঠ হয় না, বরং প্রত্যেকের কাজ-কর্মই শ্রেষ্ঠত্বের ভিত্তি। কারও নবী ও গ্রন্থ যতই শ্রেষ্ঠ হোক না কেন, যদি সে ভ্রান্ত কাজ করে, তবে সেই কাজের শাস্তি পাবে। এ শাস্তির কবল থেকে রেহাই দিতে পারে- এরূপ কাউকে সে খুঁজে পাবে না।

এ আয়াত অবতীর্ণ হলে সাহাবায়ে কেরাম অত্যন্ত চিন্তিত হয়ে পড়েন। ইমাম মুসলিম তিরমিযী, নাসায়ী ও ইমাম আহমদ (র‘হিমাহুমুল্লাহ) হযরত আবু হোরায়রার রেওয়ায়েত বর্ণনা করেন যে, مَن يَعْمَلْ سُوءًا يُجْزَ بِهِ – অর্থাৎ, যে কেউ কোন অসৎকাজ করবে, সেজন্যে তাকে শাস্তি দেয়া হবে। আয়াতটি যখন অবতীর্ণ হল, তখন আমরা খুব দুঃখিত ও চিন্তাযুক্ত হয়ে পড়লাম এবং রসূলুল্লাহ্ (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে আরয করলাম যে, এ-

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
সব বিভাগ